Friday, August 18, 2017

বন্যার জন্য ঢাকা, দিল্লি ও কাঠমান্ডুকে দুষছে পশ্চিমবঙ্গ



পশ্চিমবঙ্গের বন্যার জন্য ঢাকা, দিল্লি ও কাঠমান্ডুকে দুষলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতে যখন ব্যাপক বন্যার দেখা দিয়েছে তখনই তৃণমূল নেত্রী এমন মন্তব্য করলেন। বন্যা ঠেকাতে নিজেদের ব্যর্থতার জন্য উল্টো প্রতিবেশী দেশগুলোকে দোষারোপ করলেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গের ‘মনুষ্য সৃষ্ট’ বন্যার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেই খ্যান্ত হননি মমতা। তিনি বলেন, ‘আত্রাই ও অন্য দুটি নদীর পানি যেন বাংলাদেশ থেকে যথাযথ মাত্রায় উত্তরবঙ্গে প্রবাহিত হয়।’ তার এই অভিযোগের মূলে রয়েছে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।

মমতার অভিযোগের পর পশ্চিমবঙ্গের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায় দেখিয়েছেন কিভাবে নেপাল ও বিহার থেকে আসা পানির অতিরিক্ত প্রবাহ উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের দুর্দশায় ফেলছে। এতে করে লাখ লাখ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। তার অভিযোগ দৃশ্যত আঞ্চলিক নদী সংযোগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যার প্রাথমিক পাঠের চেয়েও গুরুতর, তথ্যভিত্তিক অভিযোগ। তবে তিনি বর্তমান বন্যা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পেছনের প্রধান কারণটি উল্লেখ করেননি।

সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী এলাকাগুলোয় বন্যা দেখা দিয়েছে। তবে দলীয় প্রধানের কাছ থেকে একটি সূত্র নিয়ে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘মূলত নেপাল ও বিহার থেকে উচ্চ মাত্রার পানি প্রবাহের কারণেই রাজ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে তিনি মালদহসহ অন্য তিনটি জেলার অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।



মজার বিষয় হচ্ছে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী এবারের বন্যায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২০-এর নিচে। বিহার, নেপাল ও পশ্চিমবঙ্গে এ সংখ্যা যথাক্রমে ৫০, ৫৫ ও ৪৫। প্রতিকূল আবহাওয়া যেন অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতির কারণ না হয় সেটা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার এবং অন্যান্য সংস্থা কী ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে? খুব স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্ন উঠেছে। এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে, বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ এবং অন্যান্য সহায়তা পৌঁছে দিতে পশ্চিমবঙ্গের রেকর্ড উৎসাহব্যাঞ্জক নয়।

কলকাতাভিত্তিক টিভি চ্যানেলগুলোতে দিনের পর দিন দেখানো হচ্ছে, মেদিনীপুর থেকে কোচবিহার পর্যন্ত কয়েক হাজার পানিবন্দি মানুষকে আক্ষরিক অর্থেই খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তাদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার, সুপেয় পানি এবং ওষুধপত্রও পৌঁছায়নি। অধিকাংশ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিষ্কাশন চ্যানেলের অভাব, নদীর তীর ও সৈকতের অপব্যবহার, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণেই নদীগুলোর এ অবস্থা।

মালদহের বন্যাদুর্গত মোহাম্মদ শফিক বলেন, ‘প্রকৃতির খেয়ালের বাইরে রাজনৈতিক সমর্থনপুষ্ট সমাজবিরোধীদের লোভ ও দুর্নীতির জন্য মানুষকে মূল্য দিতে হবে।’

উত্তরবঙ্গ বা দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ মানুষের কাছেই ত্রাণের পরিমাণ খুবই সামান্য বা একেবারেই দৃশ্যমান নয়। অনেকেই কেবল স্থানীয় এনজিও এবং সংগঠনগুলোর প্রচেষ্টায় বেঁচে আছেন। পশ্চিমবঙ্গের এই দুই অংশেই ত্রাণবহরে ক্ষুধার্থ, উত্তেজিত জনতা কর্তৃক হামলা চালিয়ে লুটপাটের বহু দৃষ্টান্ত আছে। জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহারে এটা আরও বেশি ঘটেছে। সেখানে কিছু এলাকায় উত্তেজিত জনতার ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। তবে কর্মকর্তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
Share:

0 comments:

Post a Comment

ক্যাটাগরি তালিকা